হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়?

যে কোনও পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য হাতের লেখা সুন্দর হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরীক্ষার খাতায় উত্তর সঠিক লেখা হলেও যদি হাতের লেখা খারাপ হয়। তবে যিনি খাতা চেক করবেন এই পচা হাতের লেখা দেখে তখন স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর মুড খারাপ হয়ে যাবে। আপনার সাথেও কি এরকম কখনও হয়েছে যে আপনি পরীক্ষার খাতায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর লেখার পরেও আপনার নম্বর কম এসেছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু হতে পারে যে এটা আপনার খারাপ হাতের লেখার জন্য হয়েছে। একটা রিসার্চ থেকে জানা গেছে। যাদের হাতের লেখা সুন্দর হয় তাঁরা খুবই শান্ত এবং ঠান্ডা মেজাজের হয়ে থাকেন।

তা ছাড়া এই ধরনের স্টুডেন্ট অন্যদের তুলনায় খুবই ইন্টেলিজেন্ট হয়। তো বন্ধুরা যদি আপনার হাতের লেখা সুন্দর না হয় তবে একদমই চিন্তার কিছু নেই। কারণ আজকের এই পোষ্ট টি শুধুমাত্র আপনার জন্যই আজ এই পোষ্ট টিতে আমরা জানবো যে কীভাবে হাতের লেখা সুন্দর করা যায় এবং খুবই অল্প সময়ে কী ভাবে আরও বেশি ইমপ্রুভ করা যায়। তো চলুন শুরু করা যাক-

হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়?

বন্ধুরা হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। কিন্তু আজ এই পোষ্ট টিতে আমি আপনাদের সাথে শুধুমাত্র সেই সকল ভ্যালুয়েবল এবং জেনুইন  উপায়গুলো বিষয়ে আলোচনা করব। যেগুলো খুব প্র্যাক্টিকাল এবং এগুলো ফলো করে আপনি খুব সহজেই আপনার হাতের লেখা সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করতে পারবেন।

হাতের লেখার বিষয়টি নিয়ে আমরা অনেক অভিজ্ঞ পরীক্ষকের সাথে কথা বলেছি এবং পরীক্ষার কথা চেক করেন। এমন অনেক শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে আমি জানতে পেরেছি। যখনই তারা খাতা চেক করেন তখন প্রথম পেজে হাতের লেখার কোয়ালিটি অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট হয়।

কিছু শিক্ষক এমনও বলেছেন যে খাতা চেক করার সময় কোনও স্টুডেন্টের হাতের লেখা অনেক বেশি খারাপ দেখলে তাদের ব্রেনে অটোমেটিক্যালি এটা চলে আসছে যে এই স্টুডেন্ট নিশ্চয়ই পড়াশোনায় খুব একটা ভালো না। অপরদিকে হাতের লেখা খুবই সুন্দর হলে পরীক্ষকের ব্রেনে তখন একটা পজিটিভ ইম্প্রেশন যায়। ফলে এক্ষেত্রে শিক্ষক পজিটিভ মাইন্ডে সেই খাতাটি চেক করেন।

আর এটা সরাসরি বেনিফিট পায় সেই পরীক্ষার্থী। কারণ এতে করে তার  নম্বর বেশি আসার সম্ভাবনা কিন্তু অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।

তাই বন্ধুরা যদি আপনার হাতের লেখা আগে থেকেই সুন্দর থাকে তবে আপনি খুবই লাকি। কিন্তু যদি আপনার হাতের লেখা খারাপ হয়ে থাকে তবে একদমই টেনশন করবেন না। আপনার লেখা অবশ্যই সুন্দর হবে তো চলুন হাতের লেখা সুন্দর করার সবচাইতে কার্যকরী উপায় গুলো কে দেখে নেওয়া যাক।

১- সঠিক জায়গায় বসে লেখার অভ্যাস করুন

প্রথমেই আমাদেরকে লেখার সময় চেয়ারে বসে পদ্ধতিকে ঠিক করতে হবে। কারণ যদি আমরা সঠিক ভাবে না বসে লিখি, তবে এটি আমাদের লেখার কোয়ালিটির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং আমাদের হাতের লেখা খারাপ হতে পারে। অপরদিকে যদি আমরা সঠিক পদ্ধতিতে বসে লিখি তবে আমরা খুব সহজে সুন্দর করে লিখতে পারব।

তাই লেখার সময় আপনি অবশ্যই আরামদায়ক ভাবে বসে তবে লিখবেন এমন অনেকেই আছে যারা লেখার সময় খাতাটি কে বেকা করে ধরে তারপর লেখে এতে করে তাদের হাতের লেখাও বেকার হয়ে যায়। আবার এমনও কিছু স্টুডেন্ট থাকে যারা লেখার সময় টেবিলের উপর মাথা লাগিয়ে রেখে তারপর লেখেন কিংবা খাতার দিকে মাথা অনেক বেশি ঝুঁকিয়ে রাখে। এগুলো করাও একদমই ঠিক নয়। বরং লেখার সময় আমাদেরকে অবশ্যই সঠিক পজিশনে বসতে হবে। যাতে করে আমরা খুব কমফোর্টেবল ভাবে লিখতে পারি।

২- কলম সঠিক ভাবে ধরার অভ্যাস করুন

আসলে আমাদের হাতের লেখা দেখতে ঠিক কেমন হবে এটা অনেকটাই নির্ভর করে আমাদের কলম ধরার কৌশল এর উপর। যখন আমরা কলমটিকে শক্ত করে ধরে লিখি তখন আমাদেরকে দুইটা প্রবলেম ফেস করতে হয়। 

  1. প্রথমত আমাদের হাত খুব তাড়াতাড়ি ব্যথা হয়ে যায়। ফলে আমরা চাইলেও তখন আর দ্রুত এবং সুন্দর করে লিখতে পারে না।
  2. কলম শক্ত করে খাতা সাথে চেপে ধরে লিখলে আমাদের খাতার লেখার চাপ তার পরবর্তী পেজেও দেখা যায় যেটি দেখতে একেবারেই ভালো দেখায় না। তাই আপনি যখনই লিখবেন।এখন কলমটিকে খুব বেশি শক্ত করে ধরবে না, বরং এটিকে তখন হাল্কা করে কমফোর্টেবল ভাবে ধরে তবে লিখবেন যাতে করে এক পেজের লেখা অন্য পেজে দেখা না যায়।

৩- লেখার সময় আপনার সম্পূর্ণ হাত মুভ করাবেন 

এই টিপসটি ব্যাপারে আপনি হয়তো বা আগে কখনও শোনেননি। মুলত লেখার সময় আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই স্টুডেন্ট শুধুমাত্র হাতের পাঞ্জা ব্যবহার করে লিখে। এতে করে অল্প কিছুক্ষণ লেখার পরে আমাদের হাতে ব্যথা করতে শুরু করে এবং হাতের লেখাও তখন খারাপ হয়ে যায়।

তাই আমাদেরকে কখনও এই ভাবে লেখা উচিত নয়, বরং লেখার সময় আমাদের অবশ্যই সম্পূর্ণ হাত মুভ করে তবে লেখা উচিত। কারণ এ ভাবে লিখলে তখন আর হাতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে আমরা একটানা অনেকক্ষণ সুন্দর করে লিখতেও পারব। তাই আজ থেকেই পদ্ধতিটি ব্যবহার করুন। আশা করি একটা ভাল রেজাল্ট পাবেন।

৪- প্রথম অবস্থায় তাড়াহুড়ো করবেন না

আপনিও নিশ্চয়ই আপনার পরিবারের কারও মুখে কখনও না কখনও শুনেছেন যে কোনও কাজে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। ঠিক একইভাবে আমরা যখন অনেক বেশি তাড়াহুড়ো করে লিখেছে তখন আমাদের হাতের লেখার স্বাভাবিকভাবেই খুবই পচা হয়ে যায়। ফলে কেউই সেটি দেখে ঠিকমতো বুঝতে পারে না।

তাই লেখা সুন্দর করার জন্য আমাদের প্রথম দিকে একটু আস্তে আস্তে লেখা উচিত যাতে করে হাতের লেখা সুন্দর হয় এবং অন্যরাও যেন সেটি পড়ে খুব সহজেই তা বুঝতে পারে। তবে কিছু দিন নিয়মিত চর্চা করার পর একবার আপনার হাতের লেখা সুন্দর হয়ে গেলে। তারপর আপনি আস্তে আস্তে আপনার লেখার স্পিড বাড়াতে পারেন।

৫- নিজের জন্য একটি ভালো কলম নির্বাচন করুন

আমরা অনেকেই কলম কেনার ক্ষেত্রে বুদ্ধি না খাটিয়ে যে কলমটা দেখতে সুন্দর লাগে সেটাই কিনে ফেলি। এটি করা একদমই ঠিক নয় বরং আমাদের উচিত কলম কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো ব্রাঞ্চ এবং ভালো কোয়ালিটির কলম ক্রয় করা। যাতে কলম দিয়ে খুব সহজেই আরামদায়ক ভাবে লেখা যায়। অপরদিকে আমরা যদি সস্তা এবং নিম্নমানের কলম কিনি তবে হাতের লেখা যে খারাপ হবে তা নিশ্চিত। তাই লেখার সময় আমাদেরকে অবশ্যই সর্বদা ভাল কলম ব্যবহার করা উচিত। আসলে একাক স্টুডেন্ট এক ধরনের কলম পছন্দ হয়ে থাকে।

কেউ মোটা কলম দিয়ে লিখতে পছন্দ করেন তো কেউ চিকন কলম দিয়ে লিখতে পছন্দ করে। এক্ষেত্রে আপনি যে ধরনের কলম দিয়ে লিখতে সবচাইতে বেশি কমফোর্টেবল ফীল করবেন সর্বদা সেই টাইপের কলম দিয়ে লিখবেন। এতে করে দেখবেন আপনার হাতের লেখা আগের চাইতে অনেকটাই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় হবে।

৬- শব্দের মধ্যে একই রকম ফাঁক রাখুন 

মনে করুন একটা রুমে অনেকগুলো বল রাখা হয়েছে এবং সেগুলো এলোমেলোভাবে রুমে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অপরদিকে পাশের রুমে অনেকগুলো বল আছে। তবে সেগুলোকে সারিবদ্ধ ভাবে একটার পর একটা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

এখন আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন এই দুটোর মধ্যে কোন রুমটি দেখতে আপনার কাছে ভাল লাগবে। নিশ্চয়ই সেই রুমটি যেখানে বলগুলোকে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা আছে ঠিক একই বিষয়ে আমাদের হাতের লেখার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদি আমরা লেখার সময় শব্দগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্যাপ না রাখি। তবে আমাদের হাতের লেখাও দেখতে একদমই ভালো দেখাবে না।

তাই আমাদের উচিত লেখার সময় সর্বদা প্রতিটি অক্ষর এবং শব্দের মধ্যে সমান গ্যাপ রাখা যাতে করে আমাদের হাতের লেখা অনেক বেশি ক্লিন এবং সুন্দর দেখায়। অনেক সময় কি হয় যে আমরা লেখার সময় শব্দগুলোর মধ্যে খুবই কম গ্যাপ রাখি কিংবা অনেক বেশি গ্যাপ রাখি। দু টি ক্ষেত্রেই কিন্তু লেখার কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়। তাই হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই অক্ষরগুলো মধ্যে সমান গ্যাপ রাখতে হবে।

৭- আপনার লেখা পেজ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখুন

বন্ধুরা পরিষ্কার পানিতে যেমন সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায় ঠিক তেমনই হাতের লেখার ক্ষেত্রেও এই বিষয়টি প্রযোজ্য। যদি আমাদের লেখার পেজ একদম পরিষ্কার থাকে তবে হাতের লেখা দেখতে অটোমেটিক্যালি পরিষ্কার লাগবে। অপরদিকে যদি আপনি লেখার ক্ষেত্রে অপরিষ্কার কাগজ ব্যবহার করেন তবে আপনি যতই সুন্দর করে লেখেন না কেন, আপনার হাতের লেখা দেখতে একদমই ভালো লাগবে না। এখন আপনি জাস্ট এই দুই টা হাতের লেখাকে খুবই মনোযোগ সহকারে দেখুন

সুন্দর হাতের লেখা

যেহেতু প্রথম লেখা পেজ টি খুবই অপরিষ্কার৷ তাই এখানে হাতের লেখাও কিন্তু দেখতে একটুও ভাল লাগছে না। অপরদিকে দ্বিতীয়ত লেখাটিতে পেজ একদমই পরিষ্কার আছে। তাই এখানে স্বাভাবিক ভাবেই হাতের লেখা দেখতে খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় লাগছে।

৮- প্রতিদিন লেখার অভ্যাস করুন 

যে কোনও বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়ার জন্য সেটিকে নিয়মিত প্র্যাকটিস করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি হয়তো লক্ষ করেছেন, যদি আপনি অনেকদিন যাবৎ কোনও কারণে না দেখেন তবে আপনার হাতের লেখা এমনিতেই খারাপ হয়ে যায় এবং পুনরায় লেখার জন্য আপনাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আপনি প্রতিদিন যাই পরবেন তা খাতায় লিখে পড়ার জন্য চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার দুইটা সুবিধা হবে।

  1. প্রথমত আপনার লেখার কোয়ালিটি ইম্প্রুভ হবে। 
  2. আর দ্বিতীয়ত লিখে পড়ার কারণে আপনার সেই পড়া অনেক বেশি দিন পর্যন্ত মনেও থাকবে।

ফলে পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া পরীক্ষার আগে অবশ্যই নিয়মিত লেখার চর্চা করবেন। এটি আপনাকে পরীক্ষার হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সকল প্রশ্নের উত্তর লিখতে ও অনেক বেশি সাহায্য করবে।

এতক্ষণ আমরা এই পোষ্টে যেগুলো শিখলাম। চলুন সেগুলোকে সংক্ষেপে আরেকবার দেখে নেওয়া যাক।

  • প্রথমেই আপনি লেখার জন্য আপনার কাছে খুবই কমফর্টেবল মনে হয় এমন টাইপের কলম নির্বাচন করুন
  • লেখার জন্য অবশ্যই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাগজ নিন। 
  • লেখা স্টার্ট করার পূর্বে টেবিল চেয়ার সঠিক পজিশনে বসুন।
  • লেখার সময় যেন প্রতিটি অক্ষর এবং শব্দের মধ্যে পর্যাপ্ত গ্যাপ থাকে। এছাড়া কলম ধরার এঙ্গেল ঠিক রাখবেন।
  • প্রথম দিকে একটু আস্তে আস্তে লিখবেন এবং 
  • একবার লেখা এক্সপার্ট হয়ে গেলে। যখন আপনার লেখার স্পিড বাড়াতে পারেন, এতে করে আপনার হাতের লেখা অবশ্যই সুন্দর হবে। 

উপরের এই বিষয়টি অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।

নবীনতর পূর্বতন