রমজানের সেরা ১০টি প্রস্তুতি - Ramadan Tips

সুপ্রিয় দর্শক আসসালামুয়ালাইকুম দেখতে দেখতে বছর ঘুরে আমাদের দোরগোড়ায় আবার চলে এসেছে পবিত্রতম একটি মাস। যে মাসের জন্য আমরা সকলেই অপেক্ষা করে থাকি। আর কদিন পরেই শুরু হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার রহমত বরকত নাজাত মাগফিরাত ও বহুবীত কল্যাণের মাস রমজানুল করিম। এই মাসেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কিতাব নাযিল করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা আমাদের সিয়াম দিয়েছেন। আমরা যেন সঠিকভাবে সেটি পালন করতে পারি। তার জন্য অবশ্যই আগে থেকে যথাযথ ভাবে তার প্রস্তুতি থাকা দরকার। যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভালো কাজের পূর্ব প্রস্তুতি মানেই কাজটার অর্ধেক পূর্ণতা।

কিন্তু আমাদের সমাজে রমজান মাসকে বরণ করার জন্য রমজান মাসকে কাটানোর যে প্রস্তুতি চিত্র আমরা দেখতে পাই তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে খাদ্য গুদাম জাত করে বাজারে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা। এবং খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক আবার অনেকেই কেনাকাটা অতিরিক্ত খাবার সংরক্ষণ করা। এসব দেখে মনে হয় রমজান শুধু ভোগের জন্য আসছে। আসলে রমজান মানেই ত্যাগের মাস ইবাদতের মাস। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি দেখে বোঝাই যায় না আসলেই কি এটা ইবাদতের মাস নাকি অন্য কিছু। আল্লাহ তায়ালা সকলকে বোঝার তৌফিক দান করুক। আমিন

রমজানের সেরা ১০টি প্রস্তুতি

যাই হোক আজকে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি রমজানের পূর্ব প্রস্তুতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ  বিষয় নিয়ে। আশা করছি আমাদের রমজান মাসকে সুন্দরভাবে কাটানোর জন্য কাজে আসবে ইনশাল্লাহ। আজকের এই পোস্টটিতে আপনাদের জন্য রমজানের দশটি পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সাজিয়েছি। তো চলুন দেখে নিই রমজানের দশটি পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পর্কে


১- রমজান মাস সম্পর্কে বেশি বেশি আলোচনা করা


প্রথমত আমাদের যে কাজটি করতে হবে তা হলো। কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে রমজান মাসের মেনে চলা। এবং যেসব ফজিলত মর্যাদার করণীয় যে সমস্ত উপকারীতার কথা বলা হয়েছে সেগুলো এখন থেকে বেশি বেশি আলোচনা করতে হবে। রমজান মাস সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে হবে। এবং কল্পনা করতে হবে আর বারবার স্মরণ করতে হবে রমজান আসছে। এই রমজান আমার জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ। যে রমজানে আল্লাহ তালাকে বেশি সন্তুষ্ট করার প্রদত্ত উপায়। এ রমজানে শয়তানকে হারানোর শ্রেষ্ঠতম সময়। কারণ শয়তান রমজান মাসে শিকলে দিয়ে বাধা থাকে। তাই আমাদের মনে মনে কল্পনা করতে হবে এই রমজানে যেন আমরা  জান্নাতি হওয়ার সুযোগ লাভ করতে পারি। আমাদের রমজানের জন্য অবশ্যই মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হতে। তাহলে রমজান আমাদের জন্য খুব সহজ এবং সুন্দর হয়ে উঠবে।

২- শাবান মাস থেকে রোজা রাখা

এই রমজানের আগে অর্থাৎ গত বছর বা তার আগের কোন রমজানের রোজা যদি কাজা হয়ে থেকে তাহলে এই সাবান মাস শেষ হওয়ার আগেই পূর্বে রোজাগুলো রাখতে হবে ।কোন অসুস্থতার কারণে বা অন্য কোন কারণে কাজা হলে অবশ্যই সেগুলো আগে রাখতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাবান মাসেই সব থেকে বেশি রোজা রাখতেন। রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তাই আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব গত বছরের রোজাগুলো রাখার।

৩- রমজান মাসে তাওবা বা ইস্তিগফার করা

রমজান আসছে তার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবা বা ইস্তিগফার করা। নতুন ভাবে জীবন গড়ার জন্য নতুন ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। সেজন্য চেষ্টা করতে হবে আগের সমস্ত খাতা মুছে ফেলার। জীবনের মোড় খুঁড়ানোর জন্য আল্লাহ তালার কাছে সাহায্য কামনা করতে হবে বেশি বেশি। তাওবা বা ইস্ত্রিফার হলো রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি যাতে করে আল্লাহতালা আমাদের সকলকে মাফ করে নেক আমল করার সুযোগ করে দেন। তাই আমরা সবসময় চেষ্টা করব তাওবা ও ইস্তিগফার করা।

৪- রমজান মাসের শিরক এবং হিংসা থেকে বিরত থাকা

রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেন। জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। আমরা যেন সেই সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ পেতে পারি। সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার জন্য হাদিসের শর্ত আছে। তার মধ্যে একটি হলো সিঁড়িক এবং আরেকটি হলো হিংসা রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণহারে বহু মানুষকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। তাই আমাদের নামটাও যেন সেখানে থাকে তার জন্য চেষ্টা করতে হবে বিনা কষ্টে তার জন্য আমাদেরকে দুটি কাজ বিশেষভাবে করতে হবে হিংসা কে অন্তর থেকে মুছে ফেলতে হবে। এবং সিঁড়িক থেকে নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করতে হবে। এই দুটি কাজ রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে করতে পারলে আশা করি আমরাও সাধারন ক্ষমা পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারব। আমরা সবসময় চেষ্টা করবো রমজান মাসের সিঁড়িক এবং হিংসা থেকে বিরত থাকার জন্য।

৫- রমজান মাসে সিয়াম সম্পর্কিত মাসালা গুলো সব অর্জন করার

রমজান এবং সিয়াম সম্পর্কিত মাসালা মাসায়েল যেগুলো আছে। সেগুলো সব অর্জন করার চেষ্টা করব। ফরজ সুন্নত ওয়াজিব সমস্ত ইলমে শিক্ষা গ্রহণ করার চেষ্টা করব। রমজান মাসে রোজা কি কারণে ভাগে। রমজান মাসে কিসে রোজা দুর্বল হয়। রোজার মান কি করলে কমে বা  বাড়ে এবং  রমজান মাসে কিভাবে রোজা করা উচিত। রমজান মাসে কিভাবে রোজা করা উচিৎ না। সেগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করবো।

৬- রমজান মাসে অতিরিক্ত সওয়াব লাভের জন্য নীরব ভাবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে

অতিরিক্ত সওয়াব লাভের জন্য নীরবভাবে প্রতিজ্ঞা করতে হবে। আগের রমজান অবহেলায় কাটিয়েছি এবার যেন সুন্দর ভাবে ইবাদতের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করাতে পারি। এবং জান্নাতের খাতায় নাম লিখাতে পারি। তার জন্য মানসিকভাবে শক্ত হয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ অনেকেই আগেরবার অবহেলায় রোজা করেছিল আর বলেছিল পরেরবার রোজা সুন্দরভাবে পালন করব। কিন্তু অনেকেই হয়তো কবরে চলে গেছেন আবার অনেকেই হয়তো অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। তাই আমরা যারা এবার রোজা পার তারা অবশ্যই আল্লাহতালার শুকরিয়া আদায় করব। যাতে আমরা রোজা সুন্দর ভাবে পালন করতে পারি। ও সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করার চেষ্টা করব।

৭- রমজান মাসের একটা রুটিন তৈরি করতে হবে

সাবান মাস থেকে মহড়া দিতে হবে। কুরআন পড়ার অভ্যাস করতে হবে। রমজান মাসের একটা রুটিন তৈরি করতে হবে। অফিসে কিংবা বাসায় যেখানেই থাকি না কেন চেষ্টা করব আল্লাহকে খুশি করার। চেষ্টা করব সাধ্যমত মানুষকে সাহায্য করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু দান করার জন্য চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।

৮- রমজান মাসে দান খয়রাত ও গরিবদের ইফতারি করানো চেষ্টা করব

পিছনের যে রমজান গুলো চলে গেছে সে রমজানে যে আমলগুলো করতে পারেনি সেগুলো করার চেষ্টা করব। রমজান চলে যাওয়ার পর অনেক আফসোস করি। তাই এবারের রমজানের পর যেন কোন আফসোস না থাকে তার জন্য চেষ্টা করব। অল্প করে হলেও কোরআন অর্থ সহকারে বুঝে পড়ার চেষ্টা করব। গরিব অসহায়দের দান খয়রাত ইফতার করাতে কেন পারিনাই এমন আফসোস যেন এবার না করতে হয় সেই চেষ্টা করব। গত বছর কোন কারণে সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করতে পারিনি সেটা চিহ্নিত করতে হবে। এবং এ বছর ভালোভাবে তা পালন করার পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই রমজান মাসে ছোট ছোট ভুলগুলো সংশোধন করে রমজান পালন করার চেষ্টা করব।

৯- রমজান মাসে আল্লাহতালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে

আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করা। মালিক তোমার তৌফিক না হলে ভালো কাজ হবে না। এ রমজানে কত মানুষ ভাগ্য বানদের কাতারে নাম লেখাবে। কত মানুষ খমাপ্রাপ্ত হয়ে যাবে। কত মানুষ জায়াতি হয়ে যাবে। মালিক আমি যেন সেই সৌভাগ্যবানদের কাতারে নাম লেখাতে পারি। সেজন্য এখন থেকে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

১০ রমজানে চাঁদ দেখে  অন্যদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া

আমরা সবাই হেলাল কমিটির দিকে চেয়ে থাকি। সাবানের শেষ তারিখে যে রমজানের চাঁদ উঠেছে কিনা সেটা শোনার জন্য মোবাইল টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকি চাঁদের খবর শোনার জন্য। কিন্তু আমরা ভুলেই গিয়েছি চাঁদ দেখার সুন্নত টা।করণ পৃথিবী থেকে প্রায় বিদায় হওয়ার পথে এই সুন্নতটা চাঁদ দেখার কমিটির লোকজন চাঁদ দেখবে তবে আমাদের কেউ চেষ্টা করতে হবে রমজানের চাঁন দেখার জন্য মহানবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছে চাঁদ দেখার জন্য এবং এই খবর অন্যদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অতএব সাবানের শেষ দিন যার যার সাধ্য অনুযায়ী চাঁদ দেখার জন্য পশ্চিম আকাশে একটু অনুসন্ধান চালাবো।

উপসংহার 

সুপ্রিয় দর্শক রমজান মাস মানেই পবিত্র একটি মাস যে মাসে বেহেস্তের দরজা থাকবে খোলা। এবং দোযখের দরজা থাকবে বন্ধ। এই মাসেই একটা রাত আসবে যেটা হাজার রাতের উত্তম রাত। এই পবিত্র মাসে আল্লাহ তায়ালার দয়া থেকে যে কেউ বঞ্চিত না হয়। যে এই রমজান থেকে বঞ্চিত হয় সে আসলেই হতভাগ্য। আমরা চেষ্টা করব যেন আল্লাহতালার দয়া থেকে বঞ্চিত না হই। আমরা সবাই যেন সুস্থতার সাথে সুন্দরভাবে সিয়াম পালন করতে পারি ইনশাআল্লাহ। রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি সেরা ১০টি উপায় আপনার কাছে ভালো লেগেছে তা আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন তো আজকের পোস্টা এই পর্যন্তই। পোস্ট টি ভালো লাগলে লাইক করবেন এবং অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন।

নবীনতর পূর্বতন